এতিমের হক সিণ্ডিকেটের পকেটে

প্রকাশিত

কোমবানীর চামড়ার উপর নির্ভর করে কয়েক কোটি এতিমের লেখাপড়া ও বাঁচা মরা। একসময় এদেশের অনেক এতিমখানার শিশুরা কোরবানীর চামড়ার টাকা দিয়ে লেকাপড়া করত বিশেষ করে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কুরআনের আলো ছড়াত। বর্তমানে এতিমের ন্যায্য হক চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে এতিমখানা ও মাদ্রাসা।

কোরবানীর চামড়া বরাবরই গরীব-মিসকিন ও এতিমের হক। যারা আল্লাহর হুকুম পালনে গরু,মহিষ, ছাগল বা হালাল পশু কোরবানী করেন, সেই পশুর চামড়া বিক্রির টাকা স্থানীয় মাদরাসার গরীব ছাত্র, এতিম-মিসকিন বা গরীব মানুষের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে থাকেন। কিন্তু কয়েক বছর হলো সেই চামড়ার দাম পাচ্ছেন না পশু কোরবানী দাতারা। এবার কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম এমন কমা কমেছে যে, বিক্রির জন্য ক্রেতাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লাখ টাকার কোরবানীর গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। চামড়ার দাম না পাওয়ায় কোরবানী দাতাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে মাটিতেই পুঁতে দিচ্ছেন।


গ্রাম-গঞ্জে সাধারণত হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কোরবানীর চামড়া সংগ্রহ করে তা পরে বিক্রি করে দেন। কিন্তু, এবার তারাও চামড়া নিয়ে খুব বেশি তৎপরতা দেখাননি। কোথাও কোথাও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা চামড়া সংগ্রহের পর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তা রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন বলেও খবর আসছে।


সাধারণত কোরবানীর ঈদের দিন সকাল থেকেই কোরবানীর পশুর চামড়া কিনতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা শহরের অলিগলি এবং গ্রাম গঞ্জের পাড়া-মহল্লায় চামড়া কেনার জন্য অপেক্ষা করেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে হুজুরদেরও দেখা যেত। পশু কোরবানীর পর সেই চামড়া কেনার জন্য টানাটানিও করেন। কিন্তু এবার সে দৃশ্য দেখা যায়নি। হাতেগোনা কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া ৫শ’টাকার বেশি দাম বলেননি। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চামড়া পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন রাজধানীর পোস্তার ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে পোস্তার ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন ট্যানারি মালিকদের। তারা বলেন, সরকার প্রতি ফুট চামড়ার দাম ৫০ টাকা বেঁধে দিলেও তারা নানা অজুহাতে ওই দামে চামড়া কিনছেন না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আগে থেকেই এবারের চামড়ার বাজার খারাপ যাওয়ার কথা বলেছি। আমরা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনি না। লবণ দেওয়ার পর কিনে থাকি।

তিনি বলেন, চামড়ার পুরো বাজার নির্ভর করছে রফতানির ওপর। আগের চেয়ে রফতানি কমে গেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহও আমাদের কমাতে হয়েছে। এছাড়া এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের বছরের চামড়া বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আর অর্থের সংকট তো আছেই।

উল্লেখ্য, এ বছর গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রির কথা থাকলেও নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে অনেক কম দামে এবার বিক্রি হয়েছে চামড়া। এ জন্য মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং চামড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটকে দুষছেন অনেকে। আর চামড়ার টাকা গরীব দুঃখীদের ভেতর বণ্টন করে দেয়া হয় বলে এর দাম কমে যাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু কোরবানি হওয়ার কথা। যার মধ্যে রয়েছে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার।

আপনার মতামত জানান