এক শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম দুই বছরেও শেষ হয়নি
ফেনী সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল খান। তিন বছর ধরেই পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে৷ আগামী ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় রয়েছেন পরীক্ষা না হওয়ার শংকায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বয়স বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পরিবারের চাপ। একই বর্ষে আছি তিন বছর ধরে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কিন্তু ফের স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আবার কখন হবে সে চিন্তায় আছি।
তিনি বলেন, ‘সব কিছু খোলা আছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে সব কার্যক্রম চললেও শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম নেই।’
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সেশন জটে আটকা পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর এতেই ভয়াবহ জটে পড়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পরীক্ষা সম্পন্ন করলেও অনেক পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। নেওয়া হয়নি অনলাইন ক্লাস কিংবা পরীক্ষার কোনো উদ্যোগ। ক্লাস কিংবা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে অটো প্রমোশন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন জানানো হয় করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে এলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু মাঝে সব অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক চললেও জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সেই অর্থে স্বাভাবিক হয়নি। এতে সেশন জটের কবলে পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সব কলেজের স্নাতক (সম্মান) ও ডিগ্রি (পাশ) কোর্সের শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এরপর অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হলেও ২১ জানুয়ারি থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে ফের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে যায়। যদিও বুধবার স্থগিত হওয়া সব পরীক্ষার নতুন সূচি প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এক বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়াতে অন্যান্য বর্ষের পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেশন জট কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা হয়েছে শুধু। অন্যান্য শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা চিন্তিত। ২০২০ সালে অনার্স শেষ করার কথা কিন্তু ২০২২ সাল চলছে এখনো ফাইনাল পরীক্ষা হয়নি। কবে নাগাদ শেষ করতে পারব তা জানি না।’
হতাশ একই কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অপরাধ করেছি কি না জানি না। অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারিনি এখনো। কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে কবে, কবে আমরা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারব সে চিন্তায় আছি। সরকারি চাকরির নির্দিষ্ট বয়স সীমা থাকে। আমরা কীভাবে চাকরির জন্য আবেদন করব সেটা ভাবছি। সব প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পরীক্ষার কিন্তু ফের বন্ধ হওয়ায় আমরা জীবনের অগ্রগতি নিয়ে সংশয়ে আছি।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল কান্তি পাল। তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে শুধু এ দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এর প্রভাব পড়েছে৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। ফেনী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজ। করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব পরীক্ষা নিতে আন্তরিক হবে।’
অধ্যক্ষ বলেন, সেশন জট কাটিয়ে উঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। অনলাইন ও অ্যাসাইন্টমেন্টের মাধ্যমে সাময়িক পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। করোনা মহামারি না এলে এ জট হতো না। আগে অনার্স শেষ করতে ৬ থেকে ৭ বছর সময় লাগত কিন্তু এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের মতো সেই জট নেই।
সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে দ্রুত সব পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের হতাশ না হয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, এটি দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দেশের অনেক কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। তাই সব কিছু সম্ভব হয়ে উঠেনি৷ পরীক্ষা শুরু হয়েছিল কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে সাময়িক স্থগিত হয়েছিল। কিন্তু নতুন সূচি ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে।
আপনার মতামত জানান