ঈদে সীমিত পরিসরে হোক খাবারের আয়োজন
আবারও বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। ইতোমধ্যে বহু মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই অসুস্থ। আর্থিক অবস্থাও সবারই এখন অনেকটাই নাজুক।
এরই মধ্যে আসছে খুশির ঈদ। খুশির ঈদ হলেও বাঁধভাঙা আনন্দে ভেসে যাওয়া যাবে না। ঘুরে বেড়ানো যাবে না ইচ্ছেমতো। নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব এক হওয়া যাবে না। থাকতে হবে সতর্ক; চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ঈদে পালন করতে হবে ঘরোয়াভাবে। মজার মজার খাবার খেলেও খাবারের আইটেম বাড়ানোয় আমরা যেন বেসামাল না হই। নিজের এবং দেশের আর্থিক অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আসছে ঈদে খাবারের আয়োজনও হউক সীমিত পরিসরে।
* সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে আমাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ঢেউ গত বছরের চেয়ে শক্তিশালী। আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি, ভারতে প্রতিদিন লাখো মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন হাজারও মানুষ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশের অবস্থাও শোচনীয়। প্রতিদিন প্রায় একশ’র উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে।
হাসপাতালগুলোয় বেড উপচে পড়েছে কোভিড-১৯-এর রোগীতে। আইসিইউ বেড এখনি খালি পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদ মানে আনন্দ হলেও দেশের এমন একটা পরিস্থিতিতে ঈদের আনন্দে আমাদের সচেতনতার বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। সেই সঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না, এটি একটি যুদ্ধাবস্থা। এ যুদ্ধে জিততে হলে আপনাকে ঘরে থাকতেই হবে। তাই নিজেকে ঘরবন্দি ভাববেন না বা মন খারাপ করবেন না। বরং ঘরে বসেই কীভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, কীভাবে ঈদের দিনটিকে আনন্দময় করে তুলতে পারেন, সেটি ভাবুন। সেই সঙ্গে আপনার মনোভাব আর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলুন। প্রতিবার ঈদে টেবিলভর্তি লোভনীয় সব খাবারে হয়তো আপনার দিন কাটে, চলে অতিথি আপ্যায়ন। তাই বলে এবারও আপনাকে সেভাবেই খাবারের আয়োজন করতে হবে, এমনটা কিন্তু নয়। করোনা মহামারি আরও কতদিন থাকবে, তা আমরা কেউ জানি না। তাই এখন থেকেই অপচয় রোধ করুন। এখনও হয়তো আপনার আয় রোজগার কিংবা সঞ্চয় ভালো অবস্থায় আছে। কিন্তু সেটা সবসময় থাকবে, তা কি আপনার নিশ্চিত? বিশ্বের প্রতিটি সেক্টরে যেখানে করোনার প্রভাব পড়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন করোনার থাবায় আপনার ইনকাম অপরিবর্তনীয় থাকবে, এমনটা আশা করা সমীচীন নয়। তাই ভবিষ্যতের চিন্তা করুন। শুধু আপনার নয়, দেশের অবস্থাও চিন্তুা করুন। দীর্ঘদিন ধরে করোনা মহামারিতে আমাদের অনেকেরই আয় রোজগার কমে গেছে। কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ ব্যবসায় লস হয়ে পথে বসে যাচ্ছেন। এ রকম একটা ঈদে খাবার-দাবারে সংযত হওয়া উচিত। খাবেন না বা ঈদে বিশেষ পদ থাকবে না, তা কিন্তু নয়। তবে তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। আপনার নিজের জন্য হলেও অন্তত এখন থেকে মৃতব্যয়ী হউন।
* প্রতিবার ঈদে হয়তো আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, কলিগসহ অনেকেই বাসায় বেড়াতে আসেন বা আপনি হয়তো তাদের দাওয়াত দেন। সেক্ষেত্রে অতিথি আপ্যায়নে শীর্ষে থাকা বাঙালিদের খাবারের টেবিল নানাপদের খাবারে ভর্তি না থাকলে অবশ্য আপ্যায়ন করে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু এবার যেহেতু নিরাপত্তার কারণে শুধু পরিবারের সদস্যরা মিলে ঈদ পালন করছেন তাই অনেক পদের খুব বেশি প্রয়োজন আছে কি? এতে আপনার অর্থ এবং খাবার দুটোরই অপচয়। বরং অল্প পদ করুন পরিবারের সদস্যদের পছন্দের পদগুলো করুন। ইউটিউবে রেসিপি দেখে গণহারে নানা পদের রান্না করে ফেসবুকে ছবি দেওয়াটা এ পেন্ডামিক সিচুয়েশনে ইতিবাচক নয়। এতে অনেকেই আপনার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারেন।
* ঈদে যে শুধু দামি দামি খাবার রান্না করতে হবে, তা কিন্তু নয়। অনেক কম খরচের রেসিপিতেও কখনো কখনো অনেক বেশি স্বাদ এবং আকর্ষণ লুকিয়ে থাকে। দুই এক পাদের রিচফুড কিংবা দামি খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন দু-একটি তেমন পদও।
* শুধু খাবার-দাবার নয়, ঈদ কেনাকাটাতেও লাগাম টেনে ধরুন। কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাওয়া যতটুকু সম্ভব, এড়িয়ে চলুন। খুব বেশি প্রয়োজন পড়লে অনলাইনে অর্ডার করুন।
* খাবারের আয়োজন সীমিত পরিসরে হলেও দিনের শুরুতেই ঘরটাকে সাজিয়ে ফেলুন ঈদের সাজে। ঠিক যেমন করে প্রতিবছর ঈদে দিন সাজান। চেষ্টা করুন, ঘরেই আছে এমন জিনিসগুলোই একটু এদিক-সেদিক করে গৃহকোণে নতুন লুক দিতে।
* ঈদের দিন ডাইনিং টেবিলটা তেমনভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন, যেমনটা করেন বাসায় অতিথি এলে। এবং পরিবারের সদস্যরা মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করুন। দেখবেন, সীমিত খাবারের আয়োজনও অসীম আনন্দ দিবে।
* ঈদ মানেই শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়। ঈদের দিন একসঙ্গে সবাই মিলে টিভি দেখুন, আড্ডা দিন, ছবি তুলুন, গল্প করুন। পরিবারে বয়স্ক সদস্য থাকলে তাদের কাছ থেকে শুনতে পারেন, তাদের ছোটবেলার ঈদের অনুভূতি, ঈদ পালনের গল্প। দেখবেন, মনটা ভালো হয়ে যাবে।
* শুধু নিজের পরিবার নয়, আশপাশের অসহায় দুঃস্থ মানুষদের কথাও ভাবতে হবে। করোনার কারণে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর অনেকেই হয়তো ঈদের দিনও পেট ভরে খেতে পারবে না। তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য করতে হবে। আমরা চাইলে ঈদের খাবারের একটা অংশ তাদের জন্য রাখতে পারি। আমাদের আশপাশের অসহায় দু-একটি পরিবারকে খাওয়াতে পারি। খণ্ডকালীন গৃহকর্মী, বাড়ির দারোয়ানকে খাবার পাঠাতে পারি। সহমর্মিতা ও ভাগাভাগির এ খাবারও ঈদ উদযাপনে এনে দিবে অপরিসীম তৃপ্তি।
আপনার মতামত জানান