ইয়াবা ডনের ‘গরিবখানা’
বিশ্ববিখ্যাত সৈকত শহর। একদিকে মায়ানমার অন্যদিকে বাংলাদেশ। মাঝে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল হাতছানি। সমুদ্রপথে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দুর্গম পথ ধরে যে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্র বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে তারই বিরুদ্ধে চলছে বিরাট অভিযান। ইয়াবা-এই নামটি বাংলাদেশে সর্বত্র পরিচিত।
থাইল্যান্ড-মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকছে নিষিদ্ধ মাদক। ইয়াবা চোরাচালান রুখতে শেখ হাসিনার সরকার রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মাকড়সার জালের মতো ইয়াবা কারবারিরা ছড়িয়ে বাংলাদেশ জুড়ে। মূলত তাদের কেন্দ্র চট্টগ্রাম-টেকনাফ-কক্সবাজার। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এই এলাকা থেকেই বহু কোটি টাকার ইয়াবা চালান হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর পূর্ব ভারত ও পশ্চিমবঙ্গে সেই চক্র বিরাট শক্তিশালী হয়েছে।
লাভদায়ক এই চোরাচালান। মাদক বড়ি ইয়াবা চালান দিয়ে কক্সবাজার এলাকার একদা দিনমজুর এখন বিত্তশালী। তাদের সম্পত্তির পরিমাণ দেখলে চোক কপালে উঠবে। যে কোনও বড় শিল্পপতিকে টেক্কা দিতে পারে এমন বৈভব ছড়িয়ে তাদের বাড়িতে। গত কয়েকদিন বাংলাদেশ সরকারের ক্রমাগত অভিযানে মারা গিয়েছে ইয়াবা ডন। আর ছোট বড় ইয়াবা কারবারিদের চক্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একের পর ইয়াবা পাচারকারীর বাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। সেই অভিযানে অংশ নিয়ে চমকে গিয়েছেন সরকারি অফিসার ও পুলিশকর্তারা। চোখ ধাঁধানো অট্টালিকার মালিক ইয়াবা ডনের ‘গরিবখানা’ লজ্জা দেবে কোটিপতিকেও।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ইয়াবা পাচারের জন্য কুখ্যাত। এই মাদক কারবারের লাভ এমনই যে গরিবের ছোট ছোট কুঁড়েঘর আর নেই। তার স্থানে উঠেছে রাজপ্রাসাদের মতো অট্টালিকা। ইয়াবা আসক্ত যুবসমাজ দেখে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর মাদক বিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। পুলিশ-ব়্যাবের সঙ্গে গুলির লড়াই, একের পর এক ধরপাকড় অভিযানে ভেঙেছে বহু চক্র। শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে। সেই সব ইয়াবা ডনদের অঢেল অবৈধ সম্পদ দেখে খোদ সরকার চমকে গিয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশে শীর্ষ তিন ইয়াবা কারবারির দুটি প্রাসাদ ও জমি ক্রোক করা হয়েছে। এই সম্পত্তির দাম ৪০ কোটি টাকার বেশি হবে। এখন থেকে এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে পুলিশ। এমন আরও ৭০টি ইয়াবা ডনের প্রাসাদ ক্রোক করার সুপারিশ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে দ্রুত কাজে নামবে পুলিশ।
টেকনাফের ওসি ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। যে বাড়িগুলো ক্রোক করা হয়েছে সেগুলোর মালিক একসময় রিকশা ও ভ্যান চালক ছিল। এখন তারা সবাই কোটি টাকার মালিক। সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে ধরা পড়েছে। কয়েকজন গুলির লড়াইয়ে খতম হয়েছে।
আপনার মতামত জানান