আহত সেনাদের ভারাটে ’যৌন-সঙ্গী’ ইসরাইলি নারীরা
ইসরাইলে আহত সেনাদের জন্য সারোগেট সেক্স থেরাপি নামে এক বিতর্কিত চিকিৎসা পদ্ধতি চালু আছে। যে সেনারা কোনো সংঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তার যৌন-পুনর্বাসন দরকার, তারা সরকারি খরচে পেতে পারেন এই থেরাপি অর্থাৎ একজন সারোগেট যৌনসঙ্গীর সেবা। খবর বিবিসির।
এর অর্থ হলো— রোগীর যৌনসঙ্গী হিসেবে একজন লোককে ভাড়া করে আনা। বিতর্কিত বলেই খুব বেশি দেশে এটি চালু হয়নি। তবে ইসরাইলে সেনাদের জন্য এই থেরাপি চালু আছে। তেলআবিবে সেক্স থেরাপিস্ট রোনিট আলোনির ক্লিনিকে কনসালটেশন রুমটি দেখতে আর দশটা সাধারণ ক্লিনিকের মতোই।
আলোনির মক্কেলদের জন্য ছোট কিন্তু আরামদায়ক একটি সোফা আছে। আর আছে নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের জীববৈজ্ঞানিক চিত্র, যা রোনিট আলোনি ব্যবহার করেন বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে বলার জন্য। কিন্তু এর পাশের ঘরটিতে যা হয়, তা বেশ অবাক হওয়ার মতোই। এতে আছে একটি সোফা-বেড ও মোমবাতি।
এতে আছে একটি বিছানা, একটি সিডি প্লেয়ার, পাশে একটি স্নানের ঘর। আর ঘরের দেয়ালে আছে যৌনউত্তেজক নানা শিল্পকর্ম। আলোনি বলেন, এখানে যিনি সারোগেট অর্থাৎ ভাড়ায় আসছেন, তিনি পুরুষ বা মহিলা যাই হোন- তার কাজটা হচ্ছে পার্টনারের ভূমিকাটা পালন করা।
সমালোচকরা একে দেহ ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু ইসরাইলে এটা এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে যে, যেসব সেনা আহত হওয়ার কারণে যৌনক্ষমতা হারিয়েছেন- তাদের জন্য এই থেরাপির খরচ বহন করছে রাষ্ট্র।
আলোনি ডক্টরেট করেছেন যৌন-পুনর্বাসনের ওপর। তিনি বলেন, লোকে এখানে আসে চিকিৎসার জন্য, আনন্দের জন্য নয়। এখানে দেহ ব্যবসার সঙ্গে মিলে যায় এমন কিছুই নেই।
তা ছাড়া ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এখানকার থেরাপির সেশনগুলোর বিষয় হচ্ছে একান্ত ঘনিষ্ঠতা, স্পর্শ, দেওয়া-নেওয়া, যোগাযোগ ইত্যাদি।
এখানে শেখানো হচ্ছে, কীভাবে একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনি অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।যে পর্যায়ে এসে আপনি যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলছেন- সেটা হচ্ছে এ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ।
সারোগেটরা তাদের মক্কেলের সঙ্গে সেশনের বাইরে যোগাযোগ করতে পারেন না।
একেবারে প্রথম দিকে এই সারোগেট যৌনসঙ্গী সেবা নিয়েছিলেন এমন এক সেনা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে রিজার্ভ সৈন্য থাকা অবস্থায় তিনি একটি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন- যাতে তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
তিনি একটি উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। এতে তার কোমরের নিচ থেকে বাকি শরীর অসাড় হয়ে যায় এবং তিনি আগেকার মতো যৌন মিলন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, আমি আহত হওয়ার পর একটা তালিকা করেছিলাম- কী কী করার সক্ষমতা আমাকে অর্জন করতেই হবে।
সে তালিকায় ছিল— একা একা স্নান করতে পারা, নিজে নিজে খাওয়া ও কাপড় পরা, গাড়ি চালাতে পারা এবং কারও সাহায্য না নিয়ে সেক্স করতে পারা।
তখন তিনি বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা, কিন্তু তার স্ত্রী ডাক্তার বা থেরাপিস্টদের সঙ্গে সেক্স নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করতেন। ফলে তিনিই স্বামীকে পরামর্শ দিলেন, আলোনির সাহায্য নিতে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন— আলোনি কীভাবে তাকে এবং তার ভাড়াটে যৌনসঙ্গীকে প্রতিটি সেশনের আগে নির্দেশনা ও মতামত জানাতেন।
সপ্তাহিক এই সেশনগুলোর জন্য সরকার যে খরচ জোগাচ্ছে এটি ঠিকই আছে, কারণ তার অন্যান্য ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের খরচও তো সরকারই দিচ্ছে।
বর্তমানে তিন মাসব্যাপী এই থেরাপি কর্মসূচির মোট ব্যয় হয় ৫ হাজার ৪০০ ডলার।
আলোনির ক্লিনিকে আসেন নানা বয়স ও পেশার লোকজন। এদের অনেকে দুশ্চিন্তা বা সম্পর্কঘটিত নানা কারণে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। কেউ কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আবার অনেকে আছেন- যারা শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন।
আলোনি পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্কে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরাইলে ফিরে আসার পর তিনি যৌন সারোগেট বিষয়ে নেতৃস্থানীয় ইহুদি ধর্মগুরুদের অনুমোদন নেন। তার পর শুরু করেন একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে থেরাপি দেওয়ার কাজ।
ধর্মগুরুরা একটি নিয়ম বেঁধে দিয়েছিলেন যে কোনো বিবাহিত পুরুষ বা নারী সারোগেট হিসেবে কাজ করতে পারবে না। আলোনি এখন পর্যন্ত সেই নিয়ম মেনে চলেছেন।
একসময় তিনি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও পান। তার ক্লিনিকে ভাড়াটে যৌনসঙ্গী দিয়ে থেরাপি গ্রহণ করেছেন প্রায় এক হাজার লোক।
সূত্রঃ যুগান্তর
আপনার মতামত জানান