আরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা ওয়াংখেড়ে এখন নিজেই বিপাকে
সমীর ওয়াংখেড়ের স্ত্রীও বলিউডের অভিনেত্রী। ছবি: টুইটার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তারের পর ভারতজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন দেশটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ে। কারও কারও কাছে জাতীয় হিরোতে পরিণত হন তিনি। আরিয়ানের বিরুদ্ধে মাদক মামলার তদন্তের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে বলিউডের বাঘা বাঘা অভিনেতা অভিনেত্রীর মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন তরুণ এ কর্মকর্তা।
কিন্তু এখন তিনি নিজেই পড়েছেন বিপাকে। এরই মধ্যে বিপুল অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শাহরুখপুত্রের ঘটনায় বিজেপি এবং বিজেপি ঘেঁষা সংগঠনগুলোর অতি উৎসাহও অনেকের মনে সন্দেহ জাগিয়েছে।
এ দিকে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা এবং মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নওয়াব মালিক। আজ সোমবার অবশ্য নওয়াব মালিকের এই ব্যক্তিগত আক্রমণের পাল্টাবিবৃতি দিয়েছেন সমীর।
বিবৃতিতে সমীর ওয়াংখেড়ে বলেন, আমার ব্যক্তিগত নথি প্রকাশ করা মানহানিকর এবং অপ্রয়োজনীয় ভাবে আমার পারিবারিক গোপনীয়তাকে টেনে আনা হয়েছে। এটি আমাকে, আমার পরিবারকে, আমার বাবাকে এবং আমার প্রয়াত মাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। মন্ত্রীর টুইট ও বক্তব্য তাঁর পরিবারকে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ফেলেছে এবং তিনি নিজেও এই অপমানজনক আক্রমণে ব্যথিত।
আরিয়ানদের প্রমোদতরীতে মাদক পাওয়ার মামলার শুনানিতে বিশেষ আদালতে দাখিল করা হলফনামায়ও এসব কথা লিখেছেন সমীর। লিখেছেন, প্রতিহিংসামূলক ভাবে এটা করা হয়েছে। আমাকে গ্রেপ্তার এবং চাকরি খাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, নবাব মালিক একটি সনদের ছবি টুইট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সমীর ওয়াংখেড়ের বাবার নাম সংশোধন করা হয়েছে। তাঁর মা ছিলেন মুসলিম। আর সমীরের নামের সঙ্গে কোনো পদবি নেই। মালিক লিখেছেন, ‘জালিয়াতির শুরু এখান থেকেই’।
আরিয়ান খানের মাদক মামলায় এনসিবির স্বাধীন সাক্ষী কেপি গোসাভির বিষয়ে প্রভাকর সাইল অভিযোগ করেছেন, সমঝোতার আলাপে সমীর ওয়াংখেড়েকে ৮ কোটি রুপি ভাগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন গোসাভি। প্রভাকর সাইল নিজেকে কেপি গোসাভির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বলেও দাবি করেন। আরিয়ান খান গ্রেপ্তারের পরপরই তাঁর সঙ্গে গোসাভির একটি সেলফি ভাইরাল হয়। সম্প্রতি একটি ভিডিও ক্লিপও প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি আরিয়ান খানের বক্তব্য রেকর্ড করছেন।
প্রভাকর সাইল গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, গত ৩ অক্টোবর গোসাভি এবং জনৈক স্যাম ডি’সুজার মধ্যে ফোনালাপ তিনি শুনেছেন। সেই আলাপে গোসাভি ২৫ কোটি রুপিতে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ কোটি রুপিতে রফা হয়। এর মধ্যে ৮ কোটি রুপি সমীরকে দেওয়ার কথা হয়।
কেপি গোসাভি এখন নিখোঁজ। এনসিবি তাঁকে মাদক মামলার স্বাধীন সাক্ষী হিসেবে দাবি করেছিল। এখন প্রভাকরের বক্তব্যের বিষয়ে আদালতে একটি হলফনামা দিয়েছে এনসিবি। সেখানে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এনসিবি আদালতকে দেওয়া হলফনামায় বলছে, প্রভাকর সাইল ‘বৈরী সাক্ষী’ হিসেবে কাজ করছেন।
এনসিবির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জ্ঞানেশ্বর সিং বলেছেন, এ অভিযোগের করা তদন্ত হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে তাঁর সমীরের সঙ্গে কথা বলার সম্ভাবনা আছে।
মন্ত্রী নওয়াব মালিক সমীরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেছেন। এর মধ্যে একটিতে তিনি বলেছেন, লকডাউনের সময় সমীর ওয়াংখেড়ে মালদ্বীপে ছিলেন। তিনি একটি চাঁদাবাজি চক্রের জন্য বলিউড সেলিব্রিটিদের টার্গেট করেছেন।
এ ব্যাপারে সমীর সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেছেন, যথাযথ অনুমতি নিয়েই, আমি সন্তানদের সঙ্গে করে নিজ খরচেই সেখানে গিয়েছিলাম।
নওয়াব মালিক বারবার দাবি করে যাচ্ছেন, এনসিবির মাদক মামলাটি ‘ভুয়া’। মহারাষ্ট্র সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্যই কেন্দ্রের উসকানিতে এটা করা হয়েছে। কিছু লোককে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ নওয়াব মালিকের সহকর্মী শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত প্রভাকর সাইলের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। রাজ্য সরকারের কাছে সাইলের সুরক্ষা চেয়েছেন তিনি। এনসিবির প্রতি কড়া বার্তাও দিয়েছেন শিবসেনার এ নেতা।
গত 8 অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন আরিয়ান খান। নিম্ন আদালতে উত্তেজনাপূর্ণ শুনানির পর তাঁর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। তিনি এখন বোম্বে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। আগামীকাল আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রমোদতরীতে থাকলেও আরিয়ানের কাছে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি শুধু তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এনসিবির দাবি, আরিয়ান একটি আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
আপনার মতামত জানান