আম্মান! প্রথম বর্ষেই অবন্তিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষেই অবন্তিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান। প্রেমের ডাকে সাড়া না পেয়ে অবন্তিকাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আলী আক্কাসের মাধ্যমে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল বরাবর একটি অভিযোগ দেন অবন্তিকা। ওই অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগপত্রে অবন্তিকা উল্লেখ করেন, প্রথম বর্ষে আম্মান তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অবন্তিকা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর কিছুদিন পর থেকেই আম্মান তাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা শুরু করে। তাকে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে দেখা হলে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করছিল আম্মান। প্রতিবাদ করায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়। হুমকি দিয়ে আম্মান অবন্তিকাকে বলেছিল, তাকে এমনভাবে ফাঁসাবে যাতে সমাজে মুখ দেখাতে না পারে এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
অভিযোগপত্রে অবন্তিকা লেখেন, তখন আমার বাবা অসুস্থ থাকায় আমি এ বিষয়ে গুরুত্ব দেইনি। পরে আমি তাকে স্পষ্ট করে বলে দেই আমার সঙ্গে যেন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যোগাযোগ না রাখে। কিন্তু যখনই আমার বন্ধুরা আমার থেকে চলে যেত, তখনই সে আমাকে একা পেয়ে ফাঁকা ক্লাসরুমে ডাকতো। আমি তাকে ইগনোর করে চলে যেতে চাইলে সে আমার পথ আটকে ধমক দিতো। তার জন্য আমি প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত। রাস্তাঘাটে চলাচলেও অনিরাপদবোধ করি।
এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, অবন্তিকা যখন প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দেয়, তখন আমি তাকে বলছি অফিসে এসে সরাসরি কথা বলতে। তাদের এই ঘটনা নিয়ে অতীতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। আবার ওই সময় ভিসি স্যার মারা যাওয়ায় আর এসব বিষয়ে শুনতে পারিনি। অবন্তিকাও আর অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেনি।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, প্রথম থেকেই অবন্তিকা বিভাগকে কিছু জানায়নি। তার সব অভিযোগ ছিল প্রক্টর অফিসকেন্দ্রিক। ছেলেদের সঙ্গে তার একটা ঝামেলা হয়েছিল। পরে শুনেছি সেটি সমাধান হয়ে গেছে। এরপর গত নভেম্বরে হঠাৎ মেয়েটি আমার কাছে এসে বলে, স্যার আগের ঘটনা মীমাংসা হয়েছে। কিন্ত ওরা এখনো আমাকে এখনো বিরক্ত করছে। সে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিতে চাইলে আমি তাতে সুপারিশ করে দেই।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০ টায় কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এর কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দীন ইসলামকে দায়ী করে যান অবন্তিকা।
আপনার মতামত জানান