আবু বকর (রা.)-এর অসিয়ত
’মানব ইতিহাসে অসিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও করণীয় বর্ণনার জন্য অসিয়ত শব্দটি ব্যবহূত হয়। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ অন্য কাউকে দেওয়া। এসব নথিপত্রের অলংকারপূর্ণ ভাষা আরবি সাহিত্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নবী-রাসুল ও জ্ঞানীদের বিভিন্ন উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে মৃত্যুশয্যায় আবু বকর (রা.)-এর অসিয়ত তুলে ধরা হলো।,
যখন আবু বকর (রা.) মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি উসমান (রা.)-কে ডেকে এনে একটি অঙ্গীকারনামা লিখতে বলেন, যা ইসলামের ইতিহাসে তাঁর সর্বশেষ অসিয়ত হিসেবে পরিচিত। তাতে লেখা ছিল, ‘পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। এটি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর খলিফা আবু বকর বিন আবু কুহাফাহর সর্বশেষ অঙ্গীকারনামা, যখন তিনি দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে আখিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছেন। এমন অবস্থায় তা লেখা হয়েছে, যখন কাফির ঈমান আনছে, পাপী লোক আল্লাহকে ভয় করছে ও মিথ্যুকরা সত্য বলছে। আমি তোমাদের ওপর ওমর ইবনুল খাত্তাবকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করছি। সে যদি সত্ ও ন্যায়বিচার করে, তাহলে তার ব্যাপারে আমার জ্ঞান ও ধারণা সত্য হলো। আর সে যদি অন্যায় ও অবিচার করে তাহলে গাইব সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান নেই। আমি তো সবার কল্যাণ প্রত্যাশা করি। সব মানুষ নিজ কর্মের ফল ভোগ করবে। (আল্লাহ বলেছেন) ‘শিগগির যারা জুলুম করেছে তারা জানতে পারবে, কোন স্থানে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২২৭) (আত তাবাকাত আল-কুবরা, হাদিস : ৩২২১),
এরপর ওমর (রা.)-কে উদ্দেশ করে আবু বকর (রা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করেছি। তোমাকে আল্লাহর ভয়ের অসিয়ত করছি। মহান আল্লাহর রাতে এমন কিছু আমল রয়েছে, যা তিনি রাতে কবুল করেন না এবং দিনের বেলা এমন কিছু আমল রয়েছে, যা তিনি রাতে কবুল করেন না। মহান আল্লাহ এমন কারো নফল আমল কবুল করেন না, যে ফরজ আমল পালন করে না। কারণ কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির আমলই আমলের পাল্লা ভারী হবে, যে দুনিয়ায় সত্যকে অনুসরণ করেছে। আর,
সত্য অনুসরণ ছাড়া কোনো আমল পাল্লায় ভারি হবে না। আর কিয়ামতের দিন আমলের পাল্লায় বাতিলের অনুসরণকারীদের আমল হালকা হবে। আল্লাহ জান্নাতবাসীর আলোচনার সময় তাদের সুন্দর আমলের কথাও তুলে ধরেছেন এবং তাদের ক্ষমা করেছেন। আমি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারব কি না, তা নিয়ে আমার খুবই আশঙ্কা হয়। আল্লাহ জাহান্নামবাসীর আলোচনার সময় তাদের মন্দ আমলের কথা তুলে ধরেছেন এবং তাদের ভালো কাজের কথা বলেননি। আমার আশা আমি যেন এই দলের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি পবিত্র কোরআনে রহমতের আয়াতের সঙ্গে আজাবের আয়াত উল্লেখ করেছেন, যেন বান্দা আশা ও ভয়ের মধ্যে থাকে এবং আল্লাহর কাছে অন্যায্য কিছুর আশা না করে। যেন বান্দা নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে না দেয়। এখন তুমি আমার অসিয়ত পুরোপুরি অনুসরণ করলে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছুই তোমার বেশি প্রিয় হবে না। আর মৃত্যুর সঙ্গে সবার দেখা হবেই। আর তুমি আমার অসিয়ত লঙ্ঘন করলে তোমার কাছে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু অপ্রিয় হবে না। আল্লাহকে অক্ষমকারী কেউ নেই।’ (আল-বায়ান ওয়াত তাবয়িন, ৩১/২)
আপনার মতামত জানান