আগুনে শেষ শিকলবন্দি জীবন

প্রকাশিত
প্রতিকি ছবি


মুন্সীগঞ্জে বাবার বাড়িতে শিকলে বেঁধে রাখা হতো রুমা আক্তারকে। তাঁর মা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে থাকেন। সম্প্রতি সেখানে বেড়াতে এসেও শিকলে বাঁধা পড়েন। বুধবার দিবাগত রাতে তাঁর থাকার ঘরটিতে আগুন লাগে। অন্যরা বের হতে পারলেও শিকলবন্দি রুমা পুড়ে মারা যান।

নিহত রুমার মা তাছলিমা বেগম দীর্ঘ একযুগ ধরে কাঁচপুরের ফজলুল হকের কলোনিতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একসময় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী দুই মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছেন।

বাড়ির মালিক ফজলুল হক ও মোতালেব মিয়া জানান, কোন ঘর থেকে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা কেউ বলতে পারছে না। তবে আগুনে তাঁদের টিনশেড ঘর, ভাড়াটিয়াদের মালপত্রসহ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিহত রুমা আক্তার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিমবাগড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার মেয়ে। জানা যায়, বাদশা মিয়ার চার মেয়ে রুমা, সুমা, ঝুমা ও রিনার মধ্যে ঝুমা ছাড়া বাকি তিনজনই মানসিক প্রতিবন্ধী। আহত তাছলিমা দীর্ঘ এক যুগ ধরে কাঁচপুরের ফজলুল হকের কলোনিতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একসময় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন।

জানা যায়, আট বছর আগে নিহত রুমা আক্তারের সঙ্গে ময়মনসিংহের সিরাজুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্রসন্তানের জন্মের পর থেকে রুমা আক্তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন বলে তাঁর পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হতো। রুমার মানসিক ভারসাম্য হারানোর চার বছর পর তাঁর স্বামী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে রুমার ছোট বোন ঝুমাকে বিবাহ দেন তাঁদের মা তাছলিমা আক্তার। ঝুমার সংসারে এক বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। আগুন লাগার সময় রুমা, সুমা, ঝুমা, রিনা ও রুমার স্বামী সিরাজুল এবং তাঁর মা তাছলিমা একঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও রুমার পায়ে শিকল বাঁধা ছিল বলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

ডেমরা ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসমান গনি জানান, অগ্নিদগ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।


আপনার মতামত জানান