অর্থ লোভ ধ্বংস ডেকে আনে

প্রকাশিত



অর্থপূজা, বৈষয়িক অর্থসম্পদের প্রতি আসক্তি মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখে। অধিক অর্থলোভ ও অর্থসম্পদের অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয়। অতীতে বহু জাতি সম্পদের লোভ ও সম্পদ নিয়ে অহংকারের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন বহু জনপদকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি, যার অধিবাসীরা নিজেদের জীবিকার গর্বে অহংকারী হয়ে পড়েছিল।

এখন দেখো, তাদের বসতবাড়িগুলো বিরান হয়ে পড়ে আছে। তাদের পরে খুব কম লোকই সেখানে বসবাস করেছে। শেষ পর্যন্ত আমিই তাদের উত্তরাধিকারী হয়েছি। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫৮)

মহান আল্লাহ এভাবেই তাঁর প্রিয় বান্দাদের অর্থপূজা থেকে বিরত থাকার প্রতি সতর্ক করেছেন। অর্থলোভ, অর্থপূজা মানুষকে আমৃত্যু আকর্ষণ করবে, আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করবে, পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের বেশি বেশি অর্থসম্পদ সঞ্চিত করার চিন্তা চরমভাবে নিমগ্ন করে রেখেছে। কবরে পা দেওয়া পর্যন্ত এ চিন্তায় তোমরা বিভোর থাকো। কখনো নয়, অতি শিগগিরই তোমরা জানতে পারবে। ’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত : ১-৩)

অর্থাৎ অর্থসম্পদকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে তোমরা ভুল ধারণার শিকার হয়েছ। বৈষয়িক সম্পদের এ প্রাচুর্য এবং এর মধ্যে পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হয়ে যাওয়াকেই তোমরা উন্নতি ও সাফল্য মনে করে নিয়েছ। অথচ এটা মোটেই উন্নতি ও সাফল্য নয়। অবশ্যই অতি শিগগিরই তোমরা এর অশুভ পরিণতি জানতে পারবে।

নাউজুবিল্লাহ। অর্থসম্পদের প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত বিষয়, এর থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় হলো, লোভলালসা ত্যাগ করা এবং মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন, ‘আদম সন্তানের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, তবু সে আরো ওই পরিমাণ সম্পদের জন্য লালায়িত থাকবে। আদম সন্তানের চোখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে না। তবে যে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৭)

হাদিসে ‘আদম সন্তানের চোখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে না’—এর উদ্দেশ্য হলো, মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের চাওয়া-পাওয়া শেষ হবে না। তবে যারা এর থেকে বের হয়ে আসবে, অল্পে তুষ্ট হবে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে, তাদের কথা ভিন্ন। কারণ তারা সম্পদ উপার্জনের জন্য কোনো হারাম পথ অবলম্বন করবে না। আল্লাহর অবাধ্য হবে না; বরং আল্লাহর আদেশ মোতাবেক চলে যতটুকু পাবে, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকবে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির ইসলাম কবুল করার সৌভাগ্য হয়েছে, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন এর ওপর পরিতৃপ্ত হওয়ার শক্তি দিয়েছেন, সে-ই (জীবনে) সফলতা লাভ করেছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৬)

হাদিসের দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায়, প্রকৃত সফলতা অর্থের আধিক্যে নয়; বরং প্রকৃত সফলতা ঈমানের পূর্ণতায়। মহান আল্লাহ যার জন্য যতটুকু রিজিক বরাদ্দ করেছেন, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। তাতে তুষ্ট থেকে ঈমানের উৎকর্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতেই ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ রয়েছে।

আপনার মতামত জানান