অবশেষে কমছে চালের দাম
বাজারে বোরো মৌসুমের নতুন চাল ওঠায় দাম কমতে শুরু করেছে। মাসখানেক আগে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকার আশপাশে বিক্রি হতো। এখন নতুন মৌসুমের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকার আশপাশে। কমেছে মাঝারি ও সরু চালের দামও।
রাজধানীর খুচরা বাজারে মুরগির দামও কমেছে, যা ঈদের আগে বেড়ে গিয়েছিল। তবে বাড়তি পেঁয়াজের দাম। এত দিন দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। খুচরা দোকানে এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। তবে সবজির দাম তুলনামূলক কম।
অবশ্য সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো চালের পড়তি দর। বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসা শুরু হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের এই প্রধান খাদ্যের দাম অনেক চড়া ছিল। বাজারে একপর্যায়ে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৫ এবং সরু চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে শুরু করে। এটা ছিল ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ দাম।
সে তুলনায় দাম এখন কম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা নতুন মৌসুমের মোটা চাল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৪৮ থেকে ৫০ এবং মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে আমনে উৎপাদিত নাজিরশাইল চাল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
নিউমার্কেটের দিনাজপুর রাইস এজেন্সির মালিক মো. হারুন উর রশিদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, চালের দাম কমেছে। তবে তাঁর দোকানে এখনো পুরোনো চাল মজুত আছে। তাই কম দামের নতুন চাল আনা হয়নি। তিনি পুরোনো মিনিকেট চাল ৫৮ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬০ টাকায় বিক্রি করেন।
রাজধানীর বাবুবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বাজারে নতুন মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৪৫ থেকে ৪৬, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৩ এবং নাজিরশাইল চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাওসার আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বোরো মৌসুমের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন চাল বাজারে আসায় দাম পড়তি। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে সব ধান কাটা শেষ হলে দাম আরও কমতে পারে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় উঠেছিল। এখন তা ১৪০ টাকার নিচে নেমেছে। সোনালিকা মুরগি উঠেছিল প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, যা এখন ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে পাঁচ টাকার মতো বাড়তি চাইছেন বিক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, পাইকারি বাজারেই দাম বেশি। নিউমার্কেটের মুদিদোকানি সোহেল মিয়াকে গতকাল এক কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি।
মসলাজাতীয় পণ্যের বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়, যা কয়েক দিন আগের তুলনায় কেজিতে দুই টাকার মতো বেশি। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়তদারেরা এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজ ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪০ টাকা।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তাই দাম সামান্য বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় হাটবাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম।
বাজারে ডাল ও চিনির দাম এখনো আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা ও সরু দানার মসুর ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অপরিবর্তিত আদা-রসুনের দাম। নিউমার্কেট ও কারওয়ান বাজারে গতকাল আদা (চীনা) ১২০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
বাজারে পটোল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, পেঁপে, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, করলা প্রভৃতি সবজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। ডিমের দাম অপরিবর্তিত। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৩০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫০ টাকা হালি দরে পাওয়া যায়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে সংগৃহিত।
আপনার মতামত জানান