অনিয়মের অভিযোগে সোনারগাঁ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত
বিশেষ প্রতিনিধি :
সংগঠনের শৃঙ্খলা ভংঙ্গ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ায় একটি ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারন সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত গনমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এ কমিটির সকল ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষনা করা হলো। একই সঙ্গে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভংঙ্গের অভিযোগে সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হলো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সোহান মোল্লা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ও সাদিপুর ইউনিয়ন কমিটির বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপজেলা কমিটি অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিতে স্থান দিয়েছিল। তাছাড়া বর্তমান কমিটি সাংগঠনিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহামুদ জানান, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এক বছরের মেয়াদে সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দুজনই বিবাহিত। তাদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ছাত্রদল, স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তি ও স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা রাখার অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কার্যক্রমে তারা অংশগ্রহন করেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিবাহিত ও অছাত্রদের দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি এবং টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও শুরুতেই তারা নিজ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে জামাত বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাথে আঁতাত করে চলছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
কমিটির অধিকাংশ সদস্য বিবাহিত ও কয়েক সন্তানের জনক। সংগঠনটির যে নিয়মনীতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল নিয়মিত ছাত্র, অবিবাহিত এবং বয়সসীমা ২৯ এর বেশি হতে পারবে না। কিন্তু সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান রাশেদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রায় সকল পদধারী নেতারই বয়সের দিক থেকে ‘আদু ভাই’ এবং বিবাহিত।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর বর্তমান কমিটি তাদের ব্যানারে লিখে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগ’। জানা যায়, হাসান রাশেদ বিএনপি থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী নেতা। নারায়ণগঞ্জের কজন প্রভাশালী নেতার শ্যালকের খালাতো ভাই রাশেদ কৌশলে ২০১৫ সালে সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদটি বাগিয়ে নেয়। তার পিতা মিলন মিয়াসহ পরিবার ও বংশীয় সবাই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়।
২০১৫ সালে শুরুর দিকে হাসান রাশেদকে সভাপতি এবং রাসেল মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ, যা ২০১৭ সালের অক্টোবরে এসে ১ বছরের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, এই মেয়াদ শেষ হলেও এখনো তারাই উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, সোনারগাঁয়ে সবচে কঠিন কাজ হলো ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি থেকে একজন ছাত্র খুঁজে বের করা। একই দৃশ্য প্রতিটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগেও। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত বলে অভিনন্দন জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান রাশেদ জানান, কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আমরা ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।
আপনার মতামত জানান