অত্যাচারী জালিম শাসকদের শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা জালিমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, “তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুম রত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য”। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আর আপনি কখনো মনে করবেন না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি তাদেরকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যে দিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। ভীত-বিহ্বল চিত্তে উপরের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৪২-৪৩]
জালিমদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর নিদর্শন পর্যায়ক্রমিক রূপে এসেছে এবং অত্যাচারীদের উপর তাঁর শাস্তি বিরতিহীন রূপে এসে পড়েছে। প্রত্যেক শুরুরই শেষ আছে এবং প্রত্যেক শাসনকালের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। মহান আল্লাহ জালিমদের শেষ পরিণতির জন্য কারণ তৈরি করেছেন এবং তাদের জুলুমের বিনিময়ে মর্মন্তুদ শাস্তির বিধানও রেখেছেন। আর তাঁর ফয়সালা আসতে খুব বেশি দিন বাকি নেই ইনশা আল্লাহ।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “বলুন, তোমরা আমাদের দুটি কল্যাণের (বিজয় ও শাহাদাত) একটির জন্য প্রতিক্ষা করছ এবং আমরা প্রতিক্ষা করছি যে, আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতিক্ষা করো, আমরাও তোমাদের সাথে প্রতিক্ষা করছি”। [সূরা তাওবা, আয়াত ৫২]
মুমিনদের পরিণতির ব্যাপারে শত্রুদের চিন্তা-ভাবনা কি? যে কোন পরিণতিই তাদের জন্য উত্তম। হয়তো বিজয় যা আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত রাখবে, নতুবা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শহীদ হওয়া যা হলো সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। আর যারা শরীয়াহ থেকে বিমুখ হয়ে বহু দূরে সরে গিয়েছে তাদের ব্যাপারে মুমিনদের দৃষ্টিভঙ্গি কি? হয়তো আল্লাহ তাদের নিজ ক্ষমতাবলে শাস্তি দিবেন, যেভাবে তিনি পূর্ববর্তী জালিমদের ধ্বংস করেছিলেন, নতুবা মুমিনরাই নিজ হাতে তাদের উদ্ধত ও হঠকারী আচরণের জন্য শাস্তি দিবে। সর্বোত্তম ফলাফল সবারই জানা। চূড়ান্ত সফলকাম মুমিনরাই হবে।
.নিশ্চয়ই আল্লাহ বহু জালিমকে ধ্বংস করেছেন, একক কিংবা গোষ্ঠী নির্বিশেষে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আর আমরা আদ ও সামূদকে ধ্বংস করেছিলাম, তাদের বাড়ি-ঘরের কিছু তোমাদের জন্য উন্মোচিত হয়েছে। আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাঁধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ। আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফিরাউন ও হামানকে। আর অবশ্যই মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ এসেছিল, অতঃপর তারা জমিনে অহংকার করেছিল। কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারে নি। সুতরাং তাদের প্রত্যেককেই আমরা তার অপরাধের জন্য পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমরা পাঠিয়েছিলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল মহাগর্জন, কাউকে আমরা মাটির নিচে ধসিয়ে দিয়েছিলাম এবং কাউকে দিয়েছিলাম ডুবিয়ে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি জুলুম করবেন, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল”। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ৩৮-৪০]
সে সকল জালিমরা যাদেরকে আল্লাহ সমন্বিতভাবে ধ্বংস করেছেন তাদের মধ্যে ছিল আদ ও সামূদ জাতির লোকজন, ছিল কারূন, ফিরাউন ও হামান। নিশ্চয়ই তাদের পরিণতি এবং ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের আগেই অবহিত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “অতঃপর আদ সম্প্রদায়, তারা জমিনে অযথা অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা লক্ষ্য করে নি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমাদের নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ১৫]
আল্লাহ তা’আলা জালিম ফিরাউন ও তার দলের অত্যাচার সম্পর্কে বলেনঃ “আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদেরকে ফিরাউনের দল থেকে রক্ষা করেছিলাম। তারা তোমাদেরকে কঠিন আযাব দিত। তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে যবেহ করত এবং তোমাদের নারীদেরকে বাঁচিয়ে রাখত। আর এতে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ছিল মহা পরীক্ষা”। [সূরা বাকারা, আয়াত ৪৯]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ “ফিরাউনের বংশধররাও তাদের পূর্ববর্তীদের মত আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দান করেছিলেন। বস্তুত আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১]
এটিই হচ্ছে শাসকের অত্যাচার, কর্তৃত্ব ও হিংস্রতার শেষ পরিণতি। যুগে যুগে বিভিন্ন ভূখন্ডে ফিরাউনের মত জালিম শাসকদের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু কোন জালিমই চিরস্থায়ী হতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেছেন। আর আখিরাতে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শাস্তি তো তাদের জন্য বরাদ্দ আছেই। জালিমরা শ্রেষ্ঠত্ব চায় ও মুমিনদের ইচ্ছাকে দমিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ফিরাউনরা যা চায় আল্লাহ তা চান না এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আল্লাহ তা’আলার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
আপনার মতামত জানান