ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান রূপপুরে

প্রকাশিত


প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের এক দিন পর পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাল দ্বিতীয় চালান। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে নাটোর-কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে।


পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালানের গাড়িবহর ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া হয়ে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছালে কর্মরত বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মীরা গাড়িগুলোকে স্বাগত জানান।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো আসার সময় মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় ছিল। নিরাপত্তার জন্য ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত পাবনা-নাটোর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইউরেনিয়াম পৌঁছার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম চালানের মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আমদানি করা পারমাণবিক জ্বালানি সড়কপথে রূপপুরে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি চালান দেশে আসবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট সাতটি চালানে আসা জ্বালানি দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

প্রথম চালান আসার পর রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি এরই মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় উন্নীত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিস্বরূপ গতকাল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করে রাশিয়া।

ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘রূপপুর এখন আর প্রকল্প নয়। এটা কিন্তু এখন একটি পারমাণবিক স্থাপনা। গতকাল দুপুরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পারমাণবিক জ্বালানি সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হয়েছে। রাশিয়া প্রতিটি মালামাল ও যন্ত্রপাতি আমাদের এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে। এখন কমিশনিং শুরু হবে।’

সংশ্লিষ্ট সনদ লাভের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও প্রস্তুত করে তাঁদের পদায়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ফাঁক রাখা হয়নি। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সুযোগ নেই।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে জ্বালানি ব্যবহৃত হবে, তা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া তিন বছর বিনা মূল্যে সরবরাহ করবে। প্রতিদিন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। একবার জ্বালানি লোডের পর প্রথম তিন বছরের জন্য বছরে একবার করে (এক-তৃতীয়াংশ) এবং পরবর্তী সময়ে দেড় বছর পরপর জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। ফলে জ্বালানির কারণে দেশের অন্যান্য কেন্দ্র যেভাবে বন্ধ থাকে, এখানে ওই ধরনের কোনো সংকট হবে না। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রথম চালানের জ্বালানির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় চালানের জ্বালানি রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর ২৯ সেপ্টেম্বর কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছায়।

আপনার মতামত জানান